প্রয়াত হলেন বিশিষ্ট অভিনেতা, পরিচালক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব গিরীশ কারনাড। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। সোমবার সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ বেঙ্গালুরুর লাভেলি রোডে নিজের বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই বিশিষ্ট অভিনেতা। বেশকিছুদিন থেকেই বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন তিনি। ক্রমশ তাঁর শরীরের অঙ্গগুলি বিকল হয়ে পড়ছিল। শুধু অভিনয়ই নয়, পরিচালক হিসেব যথেষ্ঠ সুনাম অর্জন করেছন বিশিষ্ট এই নাট্য ব্যক্তিত্ব। ছিলেন সাহিত্যক। সাহিত্য সৃষ্টির জন্যে পেয়েছেন জ্ঞানপীঠ পুরষ্কার। এছাড়াও পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ সম্মানেও সম্মানিত করা হয় তাঁকে। থিয়েটারের পাশাপাশি অভিনয় করেছেন অসংখ্য হিন্দি ছবিতে। এর মধ্যে রয়েছে পুকার, মন্থন, ইকবাল, ডোর, টাইগার জিন্দা হ্যায় এর মতো ছবি। পেয়েছিলেন চারটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডও। হিন্দি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি ভাষায় অভিনয় করেছেন কারনাড। একাধিক ছবির পরিচালকও ছিলেন। যার মধ্যে রয়েছে বহু কন্নড় ও মরাঠি ছবি। আর কে নারায়ণের মালগুড়ি ডেজ টিভি সিরিয়ালে একটি বিশিষ্ট ভূমিকায় অভিনয় করে বিশেষ জনপ্রিয়তা আজর্ন করেছিলেন।
চার দশকের বেশি সময় ধরে নাট্য চর্চার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন কারনাড। মরাঠি নাটকের অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন গিরীশ কারনাড। বহু নাটক লিখেছেন। ১৯৬১ সালে তাঁর বিখ্যাত নাটক ‘যাত্রী’ রাতারাতি তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়। এরপর একে একে মঞ্চস্থ হয় ‘তুঘলক’, ‘হায়াভাদানা’-র মতো বিখ্যাত নাটক। ১৯৬০ থেকে কন্নড় ভাষায় লেখক হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেন গিরীশ। ১৯৯৮ সালে সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরস্কার জ্ঞানপীঠে ভূষিত হন।
১৯৩৮-এর ১৯ মে তৎকালীন বম্বে শহরে জন্ম বিশিষ্ট এই নাট্য ব্যক্তিত্বের। চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন তিনি। তাঁর প্রাথমিক পড়াশোনা কর্নাটকে। অঙ্ক এবং সংখ্যাতত্ত্বে স্নাতক হওয়ার পর রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেন। একসময় কাজ করতেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসে। ক্রমে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি অভিনয় ও লেখালেখিতে যোগ দেন।
ধর্ম ও জাতপাতের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন কারনাড। বারবার তাঁর নাটকে উঠে এসেছে ধর্ম ও জাতপাতের বিরোধীতার কথা। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরও সরব হয়েছিলেন তিনি। সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সরব হয়েছিলেন। নিজেকে আরবান নকশাল বলে প্রতিবাদে নামেছিলেন। এর জন্য মামলাও হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
তাঁর মৃত্যুতে এক যুগের অবসান হল বলে মনে করছে নাট্য ও চলচ্চিত্র জগৎ।